শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফিরে দেখা রাজনীতি

মোঃ খায়রুল কবির আবাদ


নির্বাচনে রফিক সাহেব অল্প ব্যবধানে জয় লাভ করেন। আল্লাহ সম্মান রক্ষা করেন। ঐ সময় আওয়ামী লীগ ছিল অসংগঠিত এবং বিএনপি সদ্য ক্ষমতা থেকে। তাই আওয়ামী বিরোধী জোট খুব সংঘবদ্ধ এবং মতিন সাহেবের জনপ্রিয়তা ছিল অনেক সূদৃঢ়। ভোটের দিন ছিলাম হাজিগঞ্জ আওয়ামী লীগ অফিস ( সবুজ ডেকোরেটর) মকিমউদ্দিন মসজিদ মার্কেট। হাজিগঞ্জের সব কেন্দ্রের আমাদের এজেন্ট ফলাফল আমার কাছে জমা দিতেন। সামনে হাজার হাজার মানুষ। আমি শাহারাস্তি উপজেলার অফিস থেকে ফলাফল নিয়ে এখানে ঘোষণা দিতাম। রাত প্রায় বারটার পর সেনাবাহিনীর এক মেজর আমাকে ফোন করে রফিক সাহেবের জয়ের কথা জানিয়ে অতিসত্তর নিরাপদ জায়গায় আশ্রয়ে চলে যেতে পরামর্শ দিলেন। সেই মতো আমি ফলাফলের কাগজ পত্রগুলো নিয়ে অফিস ত্যাগ করে অজ্ঞাত স্থানে যাই। রাতে টিভিতে ফলাফল এবং দলের প্রার্থী জয়ের ঘোষণা আসে। এলাকায় উচ্ছ্বাস আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। অনেক বছর পর যেন আমাদের এলাকার মানুষ মুক্ত ও স্বাধীনতার স্বাদ নতুন করে পেল।

জয়ের আনন্দ নিয়ে মা’কে সালাম করে কর্ম স্থল ঢাকায় ফিরে এলাম। এতদিনের অনুপস্থিতিতে বিদেশি লন্ডন অফিসের মালিক মন্তব্য ” মনে হচ্ছে তুমি নিজেই নির্বাচন দাড়ালে?”। সত্যি কথা বলতে কি এই জয় ছিল আমার ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অস্তিত্ব রক্ষা ও মান ইজ্জতের প্রশ্ন। দুর্ভাগ্যবশতঃ হেরে গেলে আওয়ামী লীগের একটি অংশ আমাকে এবং স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ছিড়ে খেয়ে ফেলার চেষ্টা করতো। আল্লাহ সব দিক থেকে রক্ষা করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।

ঢাকায় ফিরে বরাবরের মতো ধানমন্ডি পাঁচ নম্বর সড়কে রব মামার শশুরের বাসায় সান্ধ্যকালিন আড্ডা দিতে যাই। বন্ধু গোলাম হোসেনকে নিয়ে নতুন সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম সাহেবের ধানমণ্ডি আট নম্বর সড়কে কুমিল্লার ওয়াদুদ কন্ট্রাক্টরের বাড়ির প্রথম দোতলা বাসায় দেখা করতে যাই। কিছুক্ষণ পর উনার অনুরোধে আমার গাড়ি নিয়ে বন্ধু গোলাম হোসেনকে পথে ছেড়ে নেত্রী শেখ হাসিনা বসবাসরত পাঁচ নম্বর সড়কে শেষ মাথায় লেকের পাড়ে শুধা সদনে যাই। ঢুকে দেখতে পাই আমার পরিচিত ছাত্র লীগ নেতাদের সাথে যারা নেত্রীর রুমের মুখে পাহারা দিচ্ছিল।আমি আমাদের এমপির সাথে পরিচিত করিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি নেত্রীর সাথে উনার সাক্ষাতের অনুরোধ করে একটি সোফায় বসলাম। যেখানে পূর্ব থেকে ফজলুল হক অপেক্ষা করছিলেন। আমার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তারা রফিক সাহেবকে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দেন।

আবার উনাকে বাসায় নামিয়ে আমি চলে আসি এবং নিজস্ব কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। সরকার গঠনের তোড়জোড় চলছিল কারণ আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। মন্ত্রণালয় নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছিল। শুনলাম রফিক সাহেবকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে। বরাবরের মতো আমি সান্ধ্যকালিন আড্ডায় ব্যস্ত। ফোন পেলাম রামপুরের আশ্রাফ উদ্দিন পাটোয়ারী দুলাল সাহেবের কেন রফিক সাহেবের বাসায় যাচ্ছি না জিজ্ঞাসা করেই ফোন রফিক সাহেবকে দিয়ে দিলেন। উনি যেতে বললেন। তাই গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম তিনটি রাস্তা পরে উনার বাসায়। প্রচুর ভিড়, দেখে আমি অবাক। কারণ ক্ষমতা যে কি? তার ধারণা এই অধমের ছিল না। কোনভাবে ভিড় ঠেলে প্রবেশ রুমে ঢুকা মাত্র রফিক সাহেব আমাকে ভিতরে নিয়ে উনার পরিবারের সদস্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে ওখানে থাকতে বলে চলে গেলেন যেখানে মানুষ আসতেছে আর শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। বলে রাখা ভালো রফিক সাহেবের ছোট ভাই ফারুক আমাদের সাথে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ত,তাই কিছুটা স্বস্থিতে ছিলাম। তিনি তখনও কিন্তু মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেননি।

আবার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলাম রুটি রোজগারের ধান্দা। একদিন বন্ধু রশিদের ফোন। ঢাকা আসছে, যেন অফিসে অপেক্ষা করি এবং রফিক সাহেবের ওখানে যাবে। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর এপিএস মাহবুব সাহেবকে ফোন করে বললাম দেখা করতে চাই। উনি অনুমতি নিয়ে আমার গাড়ির নম্বর জানাতে বললেন। কারণ গেইটে পুলিশ পাঠাবেন নিয়ে যেতে। সেই মতো রশীদ আসার পর গেলাম উনার সাথে দেখা করতে। যা আমার ছিল ক্ষমতার খুব কাছাকাছি প্রথম যাওয়া। দেখা করে রশীদ তার কিছু কাজ সেরে চলে আসলাম। এর পরেও আমার দুই একবার যাওয়া হয়েছে। তবে কোনো তদবির বা সুযোগ সুবিধা নিতে নয়। এর মাঝে উনি প্রথম এলাকায় যাবেন। সাথে আমাদের কয়েকজনকে যেতে বললেন।

আমি আমার গাড়ি নিয়ে উনার ধানমন্ডির বাসায় গেলাম। উনি আমাকে ভিতরে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন যেহেতু আমরা কয়েকজন তাই উনি টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান এডভোকেট আজমতউল্লাহকে উনার সাথে গাড়িতে নিতে চান। যুক্তিসঙ্গত কারনে আমি সম্মত্তি জানালাম। গেলাম প্রথম শাহারাস্তি। এলাকার সাংসদ প্রথম মন্ত্রী তাই প্রচুর সমাগম আর আনন্দ উচ্ছ্বাস। তার উপর ক্ষমতার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে কথা। পুলিশ, সিকিউরিটি ইত্যাদি ইত্যাদি। এর মাঝে আমাদের খোঁজ কে রাখে? পাত্তাই নেই। যা স্বাভাবিক ছিল বলে আমার মনে হয়। ওখানে পরিচয় হলো ফরিদগঞ্জের সফিউল্লাহ সাহেবের সাথে। চলে আসলাম হাজিগঞ্জ আমাদের বাড়িতে। হাজিগঞ্জ বালুর মাঠে বিরাট জনসভা। আমি একটু একাকি অনেকের অনুরোধ সত্ত্বেও স্টেজে না উঠে দর্শকদের সাথে প্রথম সাড়িতে চেয়ারে বসলাম। স্থানীয় অন্য নেতা সহ আমার সাথে যাওয়া সবাই তখন ষ্টেজে । উনি এলেন হাত নাড়লেন। হঠাৎ নজর পড়ল আমার দিকে। সাথে সাথে ইশারা করে মঞ্চে উঠতে বললেন। ইচ্ছা ছিল না তবুও অন্যরা সামনে দিয়ে টেনে তুললেন। পরে শুনেছি তাতে অন্য অনেকেই নারাজ হয়েছিলেন। আমি কিন্তু কোনো বক্তব্য রাখিনি কারণ আমার বক্তৃতা দেয়ার অভ্যাস ছিল না। মাঝে মাঝে কারো অনুরোধ যেতাম উনার বেইলী রোডের সরকারি বাসায় নীচ তলা পর্যন্ত। মন্ত্রী বাড়ি তাই প্রবেশাধিকার মিলত এপিএস বা পিএর মাধ্যমে। হাজিগঞ্জের রশীদ, আলী আজ্জম মজুমদার ও হোসেন ইমাম হায়দার প্রমুখ আসতেন এলাকার বিভিন্ন কাজে। ততকালীন টিএনও আতীয়ার সাহেব প্রায়ই ফোন করে জানান দিতেন যে উনি সহ তারা মন্ত্রীর বাসায়। আমাকে অন্যরা জানাত না বা আমিও আগ্রহ দেখাতাম না। মন্ত্রী থাকা কালীন উনাকে হাজিগঞ্জ সবুজ সংঘের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতি বছরের মতো বিনা মুল্যে পুস্তক বিতরণ বার্ষিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ( তার অনেক বছর আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের ক্ষমতায় আসার পর সকল স্কুলে বিনা মুল্যে পুস্তক দেয়া ব্যবস্থা করেন). মন্ত্রী থাকাকালীন দেখে ছিলাম ক্ষমতার অর্থাৎ উনার কাছাকাছি যাওয়ার কি প্রতিযোগিতা। অনেকের সাথে শুনতাম পুলিশের বিভিন্ন স্তরের অফিসারদের সাথে জানাশুনা। আবার অনেকে এই সুযোগে পিস্তলের লাইসেন্স নিয়ে নেয়। আমি দেখে শুনে হাসতাম কিন্তু বলতে পারতাম না।

তিনি এর মধ্যে ছেলের বিয়ে দিলেন। হজ্জ করতে গেলেন এবং ওখানে পড়ে পায়ে ব্যাথা ফেলেন। দুলাল সাহেবের অনুরোধে দেখতে গেলাম সিএমএইসে চিকিৎসাধীন মন্ত্রীকে। আন্দোলন শুরু বিরোধী দলের। সাথে কানাঘুষা শুনলাম রফিক সাহেবের মন্ত্রী পদ থাকছে না। এভাবে পূর্ণ মেয়াদের অনেক আগেই মন্ত্রী পদ হারালেন, যা সংসদীয় গনতন্ত্রের মধ্যে পড়ে। এলাকার মানুষ হতাশ হলেন। কারণ ইতিমধ্যে হাজিগঞ্জ শাহারাস্তি নামক স্থানটি সারা বাংলাদেশে উনার গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীত্বের কারণে বিখ্যাত এবং আমরাও অনেক সম্মানিত হয়েছিলাম। উনার মন্ত্রী পদ থাকা কালীন হাজিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাথে অর্থাৎ দলের সাথে একটি ভুলবুঝবুঝি বা দূরত্ব তৈরি হয়। যার ফলে আওয়ামী লীগ নেতারা উনার অনুষ্ঠান বর্জন করা শুরু করে। আমি কিছুটা বুঝাতে চেষ্টা করেছিলাম। যদিও পরে সম্পর্ক ঠিক হয়ে যায়।

গত মেয়াদের অসমাপ্ত ডাকাতিয়া নদীর উপর ব্রিজের কাজ অনেকটা শেষের দিকে ছিল। সম্ভবত ১৯৯৯ সালের দিকে ব্রিজটি উদ্ভোদন হওয়ার দিন ক্ষন ঠিক হয়। এলাকার মানুষের চাহিদা মোতাবেক বিশিষ্ট নেতা আবদুর রব সাহেবের নামে নামকরণ করার কথা। উপজেলা প্রশাসন টিএনও দ্বারা এম রফিক সাহেব ” আবদুর রব সেতু ” উদ্ভোদনের দুই/ একদিন আগে আমি বাড়িতে যাই এবং নিজের খরচে ব্রিজ উদ্ভোদনের প্রচারণার ব্যবস্থা করি। নির্দিষ্ট দিন বন্ধু ফার্মেসীর পিছনে আমার বসার স্থানে সকালে বন্ধুবান্ধব বেষ্টিত হয়ে ছিলাম। হঠাৎ এলাকার বিশেষ করে মকিমাবাদ গ্রামের কিছু আওয়ামী লীগের আবদুর রব ভক্তরা জানাল যে ব্রিজটির গায়ে উনার নাম না দিয়ে শুধুমাত্র “হাজিগঞ্জ সেতু ” পাথরের লেখা নামফলক লাগানো। টিএনও মঈনুউদ্দিন সাহেবকে ফোন করলে উনি জানান এই দায়িত্ব ব্রিজের কন্ট্রাক্টর /ঠিকাদার, যিনি বিএনপির সাবেক এমপি মতিন সাহেবের ভাতিজী জামাই হালিম সাহেব এবং হাজিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা দায়িত্ব নিয়েছিলেন নামফলক লাগানো। তিনি আমাকে উনার অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তিতে “আবদুর রব সেতু ” নাম উল্লেখ ছিল বলে জানান। যা আমার কাছেও এক কপি ছিল। এর মধ্যে রাগান্বিত ছেলেরা পাথরের লাগানো নামফলক ভেঙ্গে ফেলে নিয়ে আসলেন। হাজিগঞ্জ বাজার উত্তেজিত এবং বিক্ষোভ মিছিল সয়লাব। কোনভাবেই থামান যাচ্ছিল না। কাগজে বা একটি কাপড়ে ” আবদুর রব সেতু ” নাম লিখে উদ্ভোদন করার প্রস্তাব আসে আওয়ামী লীগের একটি অংশের কাছ থেকে কিন্তু আমরাসহ এলাকার জনতা তা মানতে রাজি ছিলাম না। ব্রিজটি উদ্ভোদন করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেই। প্রশাসন আমাকে আলিগঞ্জ অফিসে তলব করে। জনাব মঈনুদ্দিন সাহেব (টিএনও) আমার আগের পরিচিত ছিলেন। গিয়ে উনাকে সহ পুলিশ ও সংস্লিষ্ট সকলকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে উল্লেখ করে এমপি সাহেবকে শাহারাস্তি থেকে না আসার কথা বললাম। অনেক দেন দরবার করে আমারা রাজি না হওয়াতে এবং পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় এমপি রফিক সাহেব আসা বন্ধ করে ঢাকা চলে যান। ফলশ্রুতিতে ব্রিজটি উদ্ভোদন ছাড়াই ব্যবহৃত হতে থাকে। মেয়াদের অবশিষ্ট সময়ে আমি অনেক চেষ্টা করেও উপর স্তর থেকে সময়ের অভাবে (কারণ প্রস্তাব অনুমোদন হওয়ার আগেই বিএনপি ক্ষমতায় আসেন) নামকরণের প্রস্তাব অনুমোদন নিতে পারিনি। এলাকার দলের একটি অংশ এমপি সাহেবকে দায়ী করেন (যেহেতু তিনি এমপি ছিলেন)। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি রব সাহেবের নামে নামকরণ করার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের একটি অংশ সহ ষড়যন্ত্র করেছিল। (যা শুধু এই দলেই হয় বলে আমার ধারণা)। এই ভাবে হাজিগঞ্জে কোন ত্যাগী নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযোদ্ধা কারো নামেই কোনো রাস্তা, ব্রিজ, স্থাপনা ইত্যাদি আজ পর্যন্ত করেনি বা হয়নি। আমি কয়েকবার বলে কোনো সাড়া পাইনি।

এই কারণে দলের ততকালীন নেতাসহ এমপি রফিক সাহেবের বিরুদ্ধে একধরনের অসন্তোষ ছিল ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মিদের হৃদয়ে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে ক্রমে ক্রমে। আমিও ব্যতিক্রম ছিলাম না। তাই ১৯৯৬ সালের ভুমিকা আর ২০০১ সালের ভূমিকার মধ্যে ছিল আকাশপাতাল পার্থক্য। ২০০১ সালে উনার ব্যক্তিগত অনুরোধে নামমাত্র গিয়েছিলাম নির্বাচনের একদিন আগে। বন্ধু দীলিপ বাবুর অনুরোধ মাত্র সামান্য টাকা বালিকা কেন্দ্রের জন্য দিয়েছিলাম। আমাদের আসনসহ দেশের অধিকাংশ আসনে হেরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এল। দলের উপজেলা দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতাদের দেখা নেই। কর্মীরা বিএনপি জামাতের মামলা হামলা নির্যাতনে দিশেহারা। সাহায্য সহযোগিতা করার আমরা কেউ ছিলাম না।

২০০১ সাল আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারাল। হাফানিয়া গ্রামে সংখ্যালঘুদের উপর ততকালীন সরকারি দলের নির্যাতন। শেখ হাসিনা যাবেন স্থলপথে হাজিগঞ্জ হয়ে তাদের দেখতে। হাজিগঞ্জের কিছু ত্যাগী আওয়ামী লীগ কর্মী ইচ্ছা ও আগ্রহ প্রকাশ করলেন নেত্রীর জন্য একটি জনসভায় আয়োজন করতে। কিন্তু কোথায় উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রধান নেতারা প্রমুখ? আমাকে যখন ফোনে জানাল আমি বললাম তোমরা বন্দোবস্ত কর টাকা আমি দিব এবং উপস্থিত থাকব। সেই মতে পশ্চিম বাজারে বাস ষ্ট্যান্ডে আয়োজন করা হয়। খরচ আমি, আশ্রাফ উদ্দিন পাটোয়ারী দুলাল ( রামপুর), সিরাজ উদ্দিন আহমেদ ( বাকিলা) এবং মঞ্জু ভাই ( বলাখাল) চারজন খরচ দিলাম। মঞ্চে দখলে নিয়েছিল মতলবের বর্তমান সাংসদ রুহুল মাইকে। আরো ছিল নির্মল। একপাশে দাড়ান ছিল বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক দীপু মনি। রুহুল ও নির্মল আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল যদিও তখন উনি রাজনীতিতে অতটা পরিচিত ছিলেন না। তখন দেখিনি হাজিগঞ্জের ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতার থাকা নেতা কাউকে। যদিও নেত্রী মঞ্চে উঠার পর আমি এবং অন্য যারা এই আয়োজনের পিছনে ছিলাম তারা বলতে গেলে কেউই মঞ্চে জায়গা পাইনি। যা প্রত্যক্ষ দেখছিলেন বর্তমান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক নজিবুল্লা হিরু ভাই। ২০০১ থেকে ২০০৮ আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও আদর্শ নেতা কর্মীদের সংগ্রাম, ততকালীন সরকারি দলের নির্যাতন সহ্য করা, কারাবরণ করা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার জনসভায় ততকালীন সরকারি দলের আনুকুল্যে ( তারেক জিয়ার হাওয়া ভবন দ্বারা ব্লুপিন্ট হিসাবে খ্যাত) গ্যানেড হামলা দিয়ে দলকে নেতৃত্ব শুন্য করার চেষ্টা। প্রখ্যাত মহিলা লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ বিপুল নেতা কর্মী হত্যা, পঙ্গু হয়ে যাওয়া ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসাবে লেখা থাকবে। এভাবে পুরাতন ঐতিহ্যবাহী দলকে নিঃশেষ করে দেয়ার চেষ্টা দলের সকল স্তরের নেতা কর্মীকে বিভিন্ন ভাবে নাজেহাল করাই ছিল সরকারের উপর সরকার হাওয়া ভবনের অর্থাৎ তারেক জিয়ার ষড়যন্ত্র সত্যিই এক অরাজকতার সৃষ্টি করে।

দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে কি ত্যাগ ও পরিশ্রম। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল বিএনপির শাসন আমলে এলাকায় নেতাদের কাউকে মামলা হামলায় নির্যাতিত মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীরা পাশে পায়নি।

বিঃদ্রঃ আমি যেহেতু সক্রিয় রাজনীতিবিদ নই এবং হাজিগঞ্জ শাহারাস্তি সমগ্র এলাকায় প্রত্যেকের ভুমিকা জানার কথা নয়। এমনকি স্মৃতিতে না থাকাতেও অনেকের নাম উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি। যা আমার ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা। ইচ্ছাকৃত নয়। তবে সকলের প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। ধন্যবাদ।
বিশেষ অনুরোধ কারো কিছু জানা থাকলে তা মন্তব্যে উল্লেখ করে লিখলে আমি সহ অন্যরাও জানার সুযোগ হবে।

আসছে পঞ্চম পর্ব……

Comments are closed.

More News Of This Category